কবে এমন বাংলাদেশের খেলা দেখা গেছে, সেটা মনে করাই কঠিন। যাদের সঙ্গে জিততেই হবে—সেই মালদ্বীপ র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে ৩৪ ধাপ। ২০০৩ সালের পর থেকে সাফে নেই কোনো জয়। সেই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে স্মরণকালের অন্যতম সেরা লড়াইটা উপহার দিয়ে জয় তুলে নিল লাল-সবুজের দল।
কতটা লড়াই করেছে বাংলাদেশ, তা যেন প্রায় অবিশ্বাস্য। ম্যাচের পুরোটা সময় বলের দখল নিজেদের পায়ে রেখেছেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। তাঁদের চেহারায় ছিল যোদ্ধার মতো ভাব। ‘হার না মানা’ মানসিকতায় বাংলাদেশের সামনে স্রেফ উড়েই গেছে মালদ্বীপ।
‘বাঁচা-মরার’ লড়াইয়ে মালদ্বীপের বিপক্ষে ১-১ সমতায় প্রথমার্ধ শেষ করেছে বাংলাদেশ। ১৮ মিনিটে পিছিয়ে পড়ার পর বাংলাদেশকে ৪২ মিনিটে সমতায় ফেরায় রাকিব হোসেনের হেড। সাফের সেমিফাইনালে খেলতে হলে এই ম্যাচে জিততেই হবে বাংলাদেশকে।
ম্যাচের শুরুতে বাংলাদেশ খেলেছে দাপটের সঙ্গেই। সাত মিনিটে সোহেল রানা দারুণ এক সুযোগ তৈরি করেছিলেন দলের জন্য। প্রতিপক্ষ ফুটবলারের পা থেকে বল কেড়ে মালদ্বীপের বক্সে দারুণভাবে বলটাও বাড়িয়েছিলেন তিনি। যাঁর দিকে বল বাড়িয়েছিলেন, সেই রাকিব হোসেন বলে পা ছোঁয়াতে পারলে গোল শুরুতেই পেতে পারত বাংলাদেশ।
১১ মিনিটে এই সোহেল রানা আবারও ভোগালেন মালদ্বীপকে। জামালের কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে সোহেলের আটকে দেন মালদ্বীপ গোলরক্ষক হুসেইন শরীফ।
দারুণ খেলছিল বাংলাদেশ, বেশ ভালোই পরীক্ষা নিচ্ছিল মালদ্বীপের। কিন্তু সুরটা কেটে গেল ১৮ মিনিটে। ম্যাচে প্রথম আক্রমণেই বক্সের বাইরে থেকে শট নিলেন মালদ্বীপের সেরা তারকা হামজা মোহাম্মদ। তাঁর ডান পায়ের কোনাকুনি শটে হার মানলেন বাংলাদেশ গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো।
সেই গোলটার পরই এলোমেলো বাংলাদেশের কৌশল। পরের মিনিটে হাস্যকর ভুলে মালদ্বীপকে প্রায় দ্বিতীয় গোল উপহার দিয়েই বসেছিলেন জিকো। আক্রমণ থেকে শুরু করে সবকিছুতেই পরে বাংলাদেশ।
তবে সেই আক্ষেপ মিটে গেছে ৪২ মিনিটে। বিশ্বনাথের দ্রুত এক থ্রো থেকে বক্সে বল বাড়ান সোহেল রানা। সোহেলের বাতাসে বাড়ানো বলে হেডে রাকিবকে বল বাড়ান তপু। ফাঁকাতেই ছিলেন রাকিব। তপুর হেড থেকে মাথা ছুঁয়ে বাংলাদেশ শিবিরকে আনন্দে ভাসান রাকিব হোসেন।
সমতায় ফিরেই খেলায় ফেরে বাংলাদেশ। গতি বাড়ে আক্রমণে। ৪৫ মিনিটে রাকিবেরই আরেক শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান মালদ্বীপ গোলরক্ষক। কর্নার থেকে তপুর হেড ফিরিয়ে দেয় মালদ্বীপের গোলরক্ষণ।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণে বাংলাদেশ। ৪৭ মিনিটে কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে ফাঁকাতে বল পেয়েও ক্রস বারের ওপর দিয়ে বল বাইরে পাঠান বিশ্বনাথ ঘোষ।
গোল করে বেশ ছন্দেই ছিলেন রাকিব। মনে হচ্ছিল সাফের আগে ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছেন এই উইঙ্গার। কিন্তু ৬২ মিনিটে আবারও চোটে পড়েন রাকিব। বাধ্য হন মাঠ ছাড়তে। একই সঙ্গে জামাল ও সোহেল রানাকেও তুলে নেন কোচ। ৬৩ মিনিটে মাঠে নামেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম, শেখ মোরসালিন ও মুজিবর রহমান জনি।
এই তিন পরিবর্তনেই দ্বিতীয় সাফল্য বাংলাদেশের। ৬৭ মিনিটে ইব্রাহিমের কর্নার থেকে বল গ্রিপে ব্যর্থ হোন মালদ্বীপ গোলরক্ষক। বল বাতাসে ভাসা অবস্থায় হেড নেন তপু। বল পান ডান পোস্টে দাঁড়ানো তারিক কাজী। প্রথম দফায় তারিক শট নিলেও সেই শট ঠেকান ইব্রাহিম আইসাম। ফিরতি বলে তারিকের শট ফেরে গোললাইন থেকে। সেখান থেকে তৃতীয় দফায় হেডে বল জালে জড়িয়ে উদ্দাম উদ্যাপনে মাতেন তারিক। জাতীয় দলের হয়ে দ্বিতীয় গোলটা করে রাখলেন স্মরণীয়। আগের ম্যাচে তাঁর ভুল থেকেই প্রথম গোল করেছিল লেবানন। এই গোলে যেন সেই শাপ মোচন করলেন তারিক কাজী।
এক গোলে এগিয়ে গিয়ে নতুন উদ্দীপনায় আক্রমণে বাংলাদেশ। মাঠে নেমেই দারুণ সুযোগ তৈরি করেন শেখ মোরসালিন। ৭১ মিনিটে তাঁর শট ফিস্ট করে ঠেকান প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক।
শেষ ১০ মিনিটে বাংলাদেশে ভর করে গোল খাওয়ার ভূত। এবার হলো উল্টো। মাত্রই দুই ম্যাচ আগে অভিষিক্ত হওয়া মোরসালিন মালদ্বীপের কফিনে ঠুকে দিলেন শেষ পেরেক। বিশ্বনাথের পাস ধরে ডান পায়ের জোরালো শটে মালদ্বীপের ফেরার রাস্তা বন্ধ করে দেন তরুণ এই মিডফিল্ডার।
Source by>>>
0 comments:
Post a Comment